রাজধানীর মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিট পর পর ট্রেন চলাচল করছে। এ খবরে স্বস্তি ফিরে আসে অফিসগামীদের মধ্যে। বিশেষ করে অফিস পাড়াখ্যাত মতিঝিল এলাকায়। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছান যাচ্ছে এখন মাত্র ৪০ মিনিটে। আর একারণেই গায়ে গায়ে ভিড় লক্ষ করা গেছে এই অত্যাধুনিক নাগরিক যানে। দিন-রাত সম্পূর্ণ পথচলার প্রথম দিনে সব মেট্রো স্টেশনে ছিল একই চিত্র। টিকিটের লাইনে ভিড়, পাস কালেক্টিং বুথে ভিড় আর রেলে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ছিল লক্ষযোগ্য। রেলেও দেখা গেছে ভীষণ ভিড়। তবে এই ভিড়ের পরও বিরক্তির লেশমাত্র চোখে পড়েনি। মানুষ এক দারুণ স্বস্তি নিয়ে উঠেছে এবং ভ্রমণ করেছে।
দিন-রাত মেট্রোরেল চলার ঘোষণার দিন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছিলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল লাইন চালু হওয়ার পর প্রতিদির এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন চলাচল করেছে। তবে গতকাল সব স্টেশনে থেমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা মেট্রোরেল যাত্রী টেনেছে প্রায় আড়াই লাখ। মেট্রোরেল-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মতিঝিলের মূল সড়ক থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। মূল টিকিট কাউন্টারের সামনেও কয়েক স্তরের লাইনে অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত যাত্রী। রোববার মেট্রোরেল মতিঝিল স্টেশন ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মতিঝিল স্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ৪টি করে মোট ৮টি কাউন্টারে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। টিকিট পেতে এক প্রকারের যুদ্ধ করছেন যাত্রীরা। অফিস সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা।
তবে যাদের কার্ড আগেই করা আছে তাদের ক্ষেত্রে ভিড় দেখা যায়নি খুব একটা। সহজেই প্রবেশ করতে পেরেছেন তারা। এ বিষয়ে এক যাত্রী বলেন, আমার কার্ডটি অনেক আগেই করা হয়েছিল। টাকাও রয়েছে। এ কারণে ভোগান্তি কম হয়েছে। তবে অফিস সময়ের কষ্ট মেনে নিতেই হবে।
এর আগে শনিবার প্রথমবারের মতো মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে। প্রথম দিনই মেট্রোরেলের সব স্টেশনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনে যেমন এ গণপরিবহন ব্যবহার করেছে, আবার অনেক বিনোদনপ্রেমী মানুষের ভিড়ও দেখা গেছে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে। ওই দিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ ভিড় দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরের গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু হয়। এর মাধ্যমে এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনই চালু হয়। এতদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে এবং সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলাচল করতো। এখন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল রুটে ছুটছে মেট্রোরেল।
গতকাল রোববার সকালে মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, অফিসগামী মানুষ এই স্টেশন থেকে মতিঝিল ও সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে উঠছেন। আবার কেউ বিভিন্ন স্টেশন থেকে এ স্টেশনে এসে নামছেন। যাত্রীরা বলছেন, যানজটের এই শহরে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে মেট্রোরেল। সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ভীঘ্নে যাতায়াত করতে পেরে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। এছাড়াও আরো দেখা যায়, স্টেশনে আগত সকল শ্রেণির দর্শনার্থী ও অফিসগামীরা ও খুশি।
বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, মেট্রোরেলের কারণে তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত সুন্দর ও আরামদায়ক হয়েছে। আগে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে চিন্তা করতে হতো কতক্ষণ জ্যামে বসে থাকা লাগবে। এখন আর তাদের সেই চিন্তা নেই। খুব সহজেই তারা এখন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে পারে।
সুত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশন চালু হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। এর মধ্য দিয়ে এমআরটি ৬ লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশনই চালু হয়। তবে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলতো। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল করছিল মেট্রোরেল। ২০ জানুয়ারি থেকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল।