ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ নিয়ে বহুকাল ধরে যে বিতর্ক চলে আসছে, সেই ইতিহাসের পাতায় আজ যুক্ত হচ্ছে আরেকটি অধ্যায়। পনেরো শতকের ঐতিহাসিক স্থাপনা ৩২ বছর আগে গুঁড়িয়ে দেয় একদল কট্টর হিন্দুত্ববাদী। ঠিক সেখানেই এই রামমন্দির নির্মিত হয়েছে। ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগ দিয়ে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ মন্দির উদ্বোধন করতে চলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর আনন্দবাজার, পিটিআই ও এনডিটিভি অনলাইনের।
গত শতাব্দীর ছবিগুলোতে বাবরি মসজিদের যে অবয়ব দেখা যায়, সেই কাঠামো আর নেই। প্রাচীন স্থাপনার আদলে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নান্দনিক স্থাপনা। দেওয়ালে দেওয়ালে বসেছে কারুকাজ আর দেব-দেবীর প্রতিমূর্তি। আলোয় ঝলমলে স্থাপনার গম্বুজের মতো চূড়াগুলোতে উড়ছে গেরুয়া পতাকা। মুঘল সম্রাট বাবরের নামে প্রতিষ্ঠিত বাবরি মসজিদটি সম্রাটের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। মসজিদ নির্মাণের স্থানটিকে রামের জন্মভূমি বলে দাবি করে আসছেন অনেকে। একটি পুরনো মন্দির ভেঙে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে তাদের দাবি। এসব নিয়ে যুগের পর যুগ চলা বিতর্কের মধ্যে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু ‘করসেবকরা’ পুরনো মসজিদটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের ‘ভিতে আঘাত’ বলেই মনে করা হয়। ওই ধ্বংসযজ্ঞ চালানোতে অংশ নেন সান্তোষ দুবে নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘সেটি ছিল ধর্মীয় কাজ। আর এটি সম্পূর্ণ করার জন্যই পৃথিবীতে আমার আসা। এতে কোনো অপরাধ বা পাপ নেই। সান্তোষ নিজেও একজন ‘করসেবক’। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসে অংশ নেওয়া হাজারো ‘করসেবকদেরই’ একজন ছিলেন তিনি। আর সেই দিনটি ছিল স্বাধীন ভারতের অন্ধকারতম একটি দিন, যাকে ঘিরে চলা বিতর্ক আর ধর্মীয় ফাটলে সৃষ্ট সহিংসতায় হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে।
তিন দশক পর সেই জায়গায় সুবিশাল রামমন্দির উদ্বোধন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের দেশে বিতর্কিতই, বিশেষ করে স্থাপনাটি নিয়ে বিভাজনমূলক ইতিহাসের কারণে।
অপর দিকে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগ দিয়ে বিতর্কিত রামমন্দিরের উদ্বোধনকে মোদির তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার অনানুষ্ঠানিক প্রচার হিসেবেই দেখছে অনেক ভারতীয়। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা এই মহাসমারোহের অধীর অপেক্ষায়, দিনটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাদের অর্ধদিবস ছুটি দেওয়া হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের জন্য দিনটি উৎসবের হলেও ভারতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য এটি কেবল ভয় আর বেদনার স্মৃতিই জাগিয়ে তুলবে। মুসলিমদের কেউ কেউ তাদের সন্তানদের শহরের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, সারাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে রাস্তায় নামলে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।