১২ জানুয়ারী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপবাস পালন করছেন এবং গেরুয়া পড়ে একের পর এক মন্দির পরিদর্শন করছেন। সোমবার মোদি বাবরি মসজিদের জায়গায় নির্মানাধীন রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন। ভারতর সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেস এই অনুষ্ঠান বর্জন করেছে। জ্যোতিষী এবং পুরোহিত বিজয় মিশ্র বলেছেন, ‘মন্দিরটি ১ হাজার ১শ’ ৮০ কোটি ভারতীয় রুপি আনুমানিক ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। এটি হিন্দুদের জন্য নতুন ভ্যাটিকান হবে।’
নির্মাণাধীন রাম মন্দির উন্মোচন করা হয়েছে হিন্দুধর্মের কিছু প্রবীণ উপাসকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও, যারা মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনে সর্বাধিক ফায়দা করার জন্য এর পবিত্রতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন। মন্দিরটি উন্মোচন উপলক্ষ্যে ভারতের শেয়ার মার্কেট বন্ধ ছিল, সরকারী অফিসগুলি কেবল অর্ধেক দিন কাজ করেছে এবং সিনেমা হলগুলি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার করেছে। মোদির বিরোধীরা একে মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে জনতার মনযোগ কেড়ে নেয়া বলে অভিহিত করেছেন।
দেশটির প্রধান সরকারি হাসপাতালগুলি কর্মীদের রাম মন্দির উন্মোচন উৎসব উৎযাপন করতে দেয়ার জন্য সারাদিনের জন্য পরিষেবাগুলি হ্রাস করার ঘোষণা করেছিল, যদিও কেউ কেউ সেই ঘোষণাগুলি প্রত্যাহার করেছে। ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলি এবং জনপ্রিয় বক্তৃতাগুলি থেকে এই সত্যটি উল্লেখ করা হয়নি যে, মন্দিরটি ঠিক সেই স্থানেই নির্মান করা হয়েছে, যেখানে ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে একজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী কর্তৃক ১৬ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিক ইউসরা হুসেন বলেছেন যে, তিনি আশঙ্কা করছেন হিন্দু জাতীয়বাদের এই আগ্রাসন আগামী দিনে আরও খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, ‹আসলে, অযোধ্যার পর, মথুরা এবং কাশীর মতো অন্যান্য বিতর্কিত জায়গায় ধারাবাহিক প্রভাব পড়তে পারে।›
মোদির সংসদীয় এলাকা মথুরা এবং বারাণসীতে, যা স্থানীয়ভাবে কাশী নামেও পরিচিত, ঐতিহাসিক কিছু মসজিদ রয়েছে। মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং তার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মিত্ররা দাবি করেছে য়ে এগুলি ভেঙে ফেলা মন্দিরগুলির উপর নির্মিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের ক্রমবর্ধিত হিন্দু জাতীয়তাবাদের মেরুকরণ শুধু মুসলমানদের নিরাপত্তাই নয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক প্রভাবকেও ক্ষুণ্ন করেছে।
ভারতের ৫শ’ ৪৩টি সরাসরি নির্বাচিত সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ১শ’ ১টিতে মুসলমানরা জনসংখ্যার ২০ শতাংশেরও বেশি। এর মানে হল যে, ভারতীয় মুসলমানদের স্বাধীন ভারতের ৭৭ বছরের যাত্রার নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করার সীমিত কিন্তু নির্দিষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। তবে এখন, ধর্মীয় অনুভূতির তুঙ্গে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোট যদি বিজেপির মতো একটি দলকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয়, এই সমীকরণ আর টিকবে না। সাংবাদিক হুসেইন আফসার বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচন বিজেপির পক্ষে একতরফা বিজয় হতে পারে।’
গত সপ্তাহে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মথুরার ১৭ শতকের শাহী ইদগাহ মসজিদের তদন্তের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের একটি রায় স্থগিত করেছে যে এটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত হয়েছিল কিনা। হুসেইন বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি এভাবেই থাকবে।›
সমাজকর্মী তাহিরা হাসান বলেন, ‹ভারতে মসজিদ ও মন্দিরের পাশাপাশি হিন্দু ও মুসলমানরা শত শত বছর ধরে একে অপরের সাথে সহাবস্থান করে আসছে। উভয় উপাসনালয় সমস্ত ভারতীয়দের জন্য সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি না যে কোনও মুসলমানের মন্দির নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সমস্যা তখনই তৈরি হয় যখন ধর্ম এবং প্রার্থনালয়গুলিকে সমাজের মেরুকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়, শত্রুতা তৈরি করা হয় এবং ধর্মকে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হয়।’