তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (২০০৫) অনুযায়ী নাটক-সিনেমায় তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন বা ধূমপানের দৃশ্য দেখানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। দেশি-বিদেশি সব সিনেমা, নাটক ও ডকুমেন্টারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রেও এই নীতিমালা মানতে হবে। তবে গল্পের প্রয়োজনে ধূমপানের দৃশ্য দেখানোর বিধান রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যথাযথ পদ্ধতিতে তামাকজাত পণ্যের ক্ষতিকর দিক স¤পর্কে লিখিত সতর্কবার্তা প্রদর্শনের শর্ত মানতে হবে। কিন্তু নীতিমালা ভঙ্গ করে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও আইনের তোয়াক্কা না করে কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই নাটকে থাকছে মদ্যপান ও ধূমপানের দৃশ্য। সম্প্রতি মুক্তি পায় মারুফ হোসেন সজীব পরিচালিত নাটক ‘ভালোবাসার ৫ টন’। নাটকটির ৯ মিনিটের সময় অভিনেতা সাজু খাদেমকে মদ্যপান দৃশ্যে দেখা যায়। তবে পর্দায় কোথাও ছিল না সতর্কবার্তা। একই নাটকের ৩২ মিনিট ও ৩৮ মিনিটের দিকে আবারো সাজু খাদেমকে মদ্যপান দৃশ্যে দেখা যায়। সেখানেও ছিল না কোন সতর্কবার্তা। সপ্তাহ না যেতেই আরও একটি নাটকে দেখা যায়, ধূমপানের দৃশ্যে নেই কোন সতর্কবার্তা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে মাহমুদুর রহমান হিমির ‘সেই তুমি’ নাটকের ৩ মিনিটের দিকে অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান ও সাব্বির আহমেদকে ধূমপান করতে দেখা যায়। প্রায় তিন মিনিটের ধূমপানের দৃশ্যে পর্দায় কোন সতর্কবার্তা পর্দায় দেখা যায়নি। এমন আরও অনেক নাটক রয়েছে, যেগুলোতে ধূমপান ও মদ্যপান দৃশ্যে পর্দায় সতর্কবার্তা দেয়া হয় না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই এমন দৃশ্য কেন দেখানো হচ্ছে জানতে চাইলে ‘ভালোবাসার ৫ টন’ নাটকের নির্মাতা মারুফ হোসেন সজীব এর কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বরং নাটক সম্পাদনার ওপর দায় চাপিয়েছেন। অথচ পরিচালক হিসেবে তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, আমি সবকিছু লেবেল কো¤পানিতে পাঠিয়েছিলাম। এডিটর তাড়াহুড়ার মধ্যে কাজ করেছে। এ কারণে এমন ভুল হয়েছে। লেবেল কো¤পানিতে পাঠানোর পর তারাও খেয়াল করেনি। সবকিছু মিলিয়ে ভুলেই ব্যাপারটা ঘটে গেছে। এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছু বলার নেই। ‘সেই তুমি’ নাটক প্রসঙ্গে নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমিও সম্পাদনার ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, এই সমস্যাটা হয়েছে এডিটিং প্যানেলের ভুলের জন্য। আমরা কখনোই ধূমপান বা মদ্যপানের দৃশ্য সতর্কবার্তা ছাড়া দেই না। মূলত তাড়াহুড়া করার কারণে এই ভুলটি হয়েছে। নাটকে সতর্কবার্তা ছাড়া মদ্যপান ও ধূমপানের দৃশ্য জুড়ে দেয়া প্রসঙ্গে নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড-এর সাধারণ স¤পাদক কামরুজ্জামান সাগর বলেন, সতর্কবার্তা আমরা সকলেই দিচ্ছি। একটা-দুইটা উদাহরণ হতে পারে না। যারা দিচ্ছে না, তাদের আমরা অবহিত করব এবং আমরা সকল নির্মাতাদেরও সতর্ক করব। তবে অনুসন্ধান করলে আরও অনেক নাটকে এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে রয়েছে, মাবরুর রশিদ বান্না পরিচালিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘বদমাইশ পোলাপান’ সিজন ৩-এর এপিসোড ৭ এ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধূমপানের দৃশ্যে ছিল না সতর্কবার্তা। একই পরিচালকের আরও একটি নাটক ‘ব্রেকআপ’-এ আফরান নিশোর ধূমপানের দৃশ্যে ও মুসতাক মুকুল পরিচালিত ‘গার্লফ্রেন্ডের প্রতিশোধ’ নাটকে আরশ খানের ধূমপানের দৃশ্যেও ছিলনা কোন সতর্কবার্তা। নাটকে অশ্লীলতা, ধূমপান ও মদ্যপান প্রসঙ্গে নাট্যবোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অল্লীল দৃশ্য, অশ্লীল সংলাপ, ধূমপান, মদ্যপান এসব নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে পরিচালকরা সবসময় গল্পের প্রয়োজনের দোহাই দেন। কিন্তু ঐসব দৃশ্যে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ না দেয়ার অর্থ হচ্ছে, এসব বিষয় তারা গল্পের প্রয়োজনে দেন না, আর এসব বিষয়কে কোন গুরুতর বিষয়ও ভাবেন না। তারা বলেন, যেখানে অশ্লীল দৃশ্য ও সংলাপ চলে, সেখানে ধুমপান-মদ্যপানের সতর্কবার্তা না দেয়া তো কিছুই না। তবে অবশ্যই সতর্কবার্তা দেওয়া উচিত। নাট্যজনেরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে এই অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত হয়ে যাবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম তখন উৎসাহিত হবে তামাক সেবনে। সরকারি বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও যেখানে এরকম অনিয়ম হচ্ছে, আশা করব কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সুনজর দিবেন।