বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘এখন যদি কেউ এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে তা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে। আর যেন তা না করতে পারে সে জন্য সবাই সতর্ক থাকবেন।’
গতকাল বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা গৃহবধূ সুমাইয়ার মায়ের বাড়িতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছিলাম শহীদ বোন সুমাইয়ার অবুঝ শিশুকে দেখতে।
যার মুখে এখনো ভাষা ফোটেনি। এই শিশুর যখন মুখে ভাষা ফুটবে তখন তার মা ডাকার মতো কেউ থাকবে না। এই শিশুর মতো যারা মা হারিয়েছে, যারা বাবা হারিয়েছে, যারা নিজেদের সন্তানদের হারিয়েছে আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন তাদের ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দেন।’
সুমাইয়ার মেয়ে সুয়াইবার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই অবুঝ শিশুর এখন থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে যাবতীয় দায়িত্ব নিলাম।
’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা জালিমের হাতে মৃত্যুবরণ করলেন আল্লাহ তাদের শহীদের মর্যাদা দান করুন। এলাকাবাসীর নিকট অনুরোধ রইল, যারা লুটতরাজ, চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদের কোনো ছাড় দেবেন না। ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এবার ছাত্র-জনতা প্রমাণ করে দিয়েছে তারা অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস করে না।
তারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমাণ করল তারা দেশে শান্তি চায়। আমরা যেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।’
সরকার পতনের পর যারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা এসব অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলব আপনারা শিক্ষা নেন, এখনো মানুষের বুকের চাপা কষ্ট দূর হয়নি। বাড়াবাড়ি যারাই করবেন জনগণ তাদের উচিত শিক্ষা দেবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণ পরিচালক সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমির মাওলানা আবদুল জব্বার, জেলা জামায়াতের আমির আলহাজ মমিনুল হক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মহানগরী নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, মহানগরী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইন, জেলা সেক্রেটারি জাকির হোসাইন, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি মো. জামাল হোসাইন, মাওলানা শিহাব উদ্দিন, ছাত্রশিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সভাপতি আসাদুজ্জামান রাকিব, সেক্রেটারি ইসমাইল হোসাইন, সাঈদ তালুকদার, হাফেজ আব্দুল মোমিন, থানা আমির কফিল উদ্দিন, মোস্তফা কামাল, অ্যাড. নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে মিজমিজি পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকায় মায়ের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছিলেন সুমাইয়া। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের ছোড়া গুলি জানালার এসএস পাইপ ছিদ্র করে তার মাথার বাঁ পাশে লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এ ছাড়া শহীদ মোস্তফা কামাল রাজু, শহীদ হৃদয়সহ সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার নিহত ও আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।