গরুর গোশতের দাম এক মাস আগে ছিল ৬০০ টাকা। রাজধানীর অনেক বাজারে মাইকিং করে গুরুর গোশত বিক্রি হতো ৫৮০ টাকা দরে। সাধারণ মানুষ খুশি; যারা গরুর গোশত ক্রয় করতে পারতেন না তারাও গরুর গোশত ক্রয় করা শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের দায়িত্বশীলরা গরুর গোশত দাম পুননির্ধারণ করে দেন ৬৫০ টাকা কেজি। সরকারের দায়িত্বশীলদের এই সিদ্ধান্তে মাওকা পেয়ে যায় অসৎ ব্যবসায়ীরা। তারা ৫৮০ টাকা বিক্রি করা গরুর গোশতের দাম একলাফে ১২০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করেন। কোথাও কোথাও গরুর গোশতের দাম এর চেয়ে বেশি আবার কোথাও কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কম। প্রশ্ন হচ্ছে গরুর গোশতের দাম বাড়িয়ে দেয়ার রহস্য কি? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার সাধারণত সি-িকেট ভেঙ্গে পণ্যের দাম কমিয়ে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার গরুর গোশতের দাম নিয়ে দেখা গেল উল্টো চিত্র?
প্রতি বছর শীতকালে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এবার এর চিত্র পুরোটাই উল্টো। শীতের ভরা মৌসুমেও রাজধানীর সবজির বাজার যাচ্ছে চড়া। বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি নয়।
এদিকে, ভরা মৌসুমে সবজির পাশাপাশি সব ধরনের মাছ, গোশত, মুরগির দামও অনেক বেশি। এছাড়া, সরকার গরুর গোশতের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও কে শোনে কার কথা! ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বর্তমানে ৭৫০ টাকা কেজিতে গরুর গোশত বিক্রি করছেন দোকানিরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে কমে যায় গরুর গোশতের দাম। সেই সময় দাম কমে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি শুরু হয় ৬০০ টাকায়। কোথাও কোথাও ৫৮০ টাকা কেজি দরেও গরুর গোশত বিক্রি হয়েছে। অথচ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতি কেজি গরুর গোশতের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। সরকার নিজেই গরুর গোশতের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় বিক্রেতারা হয়ে উঠে বেপরোয়া। তারা যেন মাওকা পেয়ে যান। বাজারে সরকারের এ নির্দেশনা মানার কোনো বালাই নেই। বর্তমানে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
বাজারে সবকিছুর এমন চড়া দামে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষ করে নি¤œবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ চরম দুর্দশায় পড়ে গেছে। ক্রেতারা পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার কথা জানালেও ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে আকস্মিক বৃষ্টিতে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া, কয়েকদিনের অতিরিক্ত শীতে কৃষক ফসল তুলতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে সবজির দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শনির আখড়া বাজার, যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজার, ধোলাইপাড় বাজার ঘুরে এমন চড়া দামের চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মতিঝিল ও শাহজাহানপুর বাজার ঘুরে দেখা গেলে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কক ও লেয়ার ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা।
অন্যদিকে, গত কিছু দিন ধরেই বাড়তি যাচ্ছে সব ধরনের মাছের দাম। সাধারণ কর্মজীবীরা শুক্রবার সাপ্তাহিক বাজার করেন। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছোট টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও শোল মাছ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভেদে দামে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমবেশি রয়েছে।
শীতের ভরা মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।
যে কারণে ঢাকার বাজারে সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এক সবজি বিক্রেতা বলেন, মূলত কিছুদিন আগের আকস্মিক বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার ভরা মৌসুমে এসেও সবজির দাম কিছুটা বাড়তে যাচ্ছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ এবং বিভিন্ন অদৃশ্য খরচগুলোর কারণে সবজির দাম এবার একটু বেশি।