লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আলাদা চারটি রিটে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নিয়োগ প্রার্থীরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আশা করছি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে রায় বাস্তবায়ন করতে রিটকারীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন।
তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও এসব প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন। তাছাড়া প্রতিবন্ধী কোটায় যারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্য থেকে যারা লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের জন্য ২০১৮ ও ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২৮৫ প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশ নেন। ২৮৫ জনের মধ্যে ২০১৮ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৬ জন। বাকি ২৭৯ জন উত্তীর্ণ হন ২০২০ সালের নিয়োগ পরীক্ষায়।
সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-এর ৩৫(১) ধারা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ ও ১৯৯৭ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্র অনুসারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থী দিয়ে পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু সরকার ২০১৮ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিপরীতে ১৮ হাজার এবং ২০২০ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ৩৭ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়। দুই দফার নিয়োগে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ দেওয়া হলেও কোটা পূরণ হয়নি।
নিয়োগ পাওয়ার অধিকারী হয়েও শারীরিক, দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী এই ২৮৫ জন বাদ পড়ায় হাইকোর্টে আলাদা চারটি রিট করেন এই নিয়োগ প্রত্যাশিরা। ১০ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী প্রার্থী নিয়োগ না দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিটে। এসব রিটে প্রাথমিক শুনানির পর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সফলতার সাথে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের নিয়োগ না দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং রিট আবেদনকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট উপজেলায় সহকারী শিক্ষক পদ সংরক্ষণ অথবা নিয়োগ বাতিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে রুলে দীর্ঘ শুনানির পর রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
২৮৫ জনের মধ্যে প্রথম রিটে আবেদনকারী ৭ জন, দ্বিতীয় রিটে ১১৪ জন, তৃতীয় রিটে ১৩৫ জন এবং চতুর্থ রিটে আবেদন করেন ২৯ জন। এদের মধ্যে অর্ধশতাধিক রিট আবেদনকারী ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে জানান এই আইনজীবী।