বাসায় নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে নাইজেরিয়ান বন্ধুসহ ইন্দোনেশিয়ায় আটক হওয়া আলোচিত বাংলাদেশি কূটনীতিক কাজী আনারকলিকে পদায়িত করা হয়েছে। অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহনের কয়েক ঘণ্টা আগে তড়িঘড়ি করে গত বৃহস্পতিবার আনারকলিকে দক্ষিণ আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক করে অফিস আদেশ জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই দিন একই সঙ্গে আরও কয়েক জনের দপ্তর পরিবর্তন ও পদায়ন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ জারি করা হয়। এর মধ্যে সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকারকে কনস্যুলার অ্যান্ড ওয়েল ফেয়ার উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে।
এদিকে, কূটনৈতিক দুনিয়ায় বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করা আনারকলিকে তড়িঘড়ি করে পদায়ন করায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এরকম একজন বির্তকিত কর্মকর্তাকে তড়িঘড়ি করে পদায়নে কার স্বার্থ জড়িত, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন উইংয়ের মহাপরিচালক অবশ্য বলছেন, সব নিয়ম মেনেই আনারকলিকে পদায়ন করা হয়েছে। তাকে তিরস্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল এবং সেই শাস্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাদক ‘মারিজুয়ানা’ কাণ্ডে জাকার্তা থেকে প্রত্যাহার করা বাংলাদেশি কূটনীতিক কাজী আনারকলির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় সরকারি তদন্ত কমিটি। ২০২২ এর আগষ্টে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে রিপোর্ট জম দেন তদন্ত কমিটির প্রধান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর কাজী আনারকলিকে ওএসডি করা হয়। তার আগেই বহিঃবাংলাদেশ থেকে তার ছুটি বাতিল হয়েছিল। তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনা মতে মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল উইং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে।
ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালনকারী কাজী আনারকলির দক্ষিণ জাকার্তার বাসভবনে নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রয়েছে এবং নাইজেরিয়ান বয়ফ্রেন্ডসহ তিনি তা নিয়মিত সেবন করেন এমন অভিযোগে দেশটির মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৫ জুলাই অভিযান চালায়। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী দায়মুক্তির আওতাধীন থাকলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকায় ইন্দোনেশিয়ান মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সেটি উপেক্ষা করেই তার অ্যাপার্টমেন্ট টাওয়ারে অভিযান চালায় এবং তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা তিনি ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি ছিলেন আনারকলি। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ডোপ টেস্ট করা হয়। পরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় তিনি মুক্তি পান। দূতাবাসের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। শর্ত দেওয়া হয় যত দ্রুত সম্ভব তাকে ইন্দোনেশিয়ার সীমানা ত্যাগ করতে। সেই প্রেক্ষিতেই সরকার তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ফিরিয়ে আনে।
এদিকে নৈতিক স্থুলন ও বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম নষ্টকারী আনারকলিকে তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ আমেরিকার মতো গুরুত্ব উইংয়ে কেন পদায়ন করা হলো এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আনারকলির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে তিরস্কার দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা উইংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’