গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের ক্ষোভের আগুন নেভেনি। বরং ঘোষিত নতুন মজুরি শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে। গাজীপুরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে এবং ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে তৈরী পোশাক শ্রমিকরা আবারো রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে দিনভর পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে ওই এলাকা যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে একজন শ্রমিক মারা যায়।
জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল কয়েক ঘণ্টা। এমনকি সন্ধ্যার পরও শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান করে। তবে রাত বাড়লে আস্তে আস্তে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে চলে যান। আন্দোলনের সময় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম আনজুয়ারা বেগম (২৪)। একই সঙ্গে জামাল উদ্দিন নামে আরো একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত হয়েছে। এদিকে গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এক শ্রমিকের মৃত্যুতে আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) এর তীব্র নিন্দা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এছাড়া পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ৪৮ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গতকাল গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করার পর ইউনিয়ন নেতারা নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপরই বিজিবি মোতায়েন করা হলো। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা দাবি জানিয়ে আসছিলেন শ্রমিকরা। এছাড়া ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন শ্রমিকরা। মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। আগামী শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশেরও আহ্বান করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন।
গত মঙ্গলবার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকাল ৭টা থেকে বিক্ষোভে নামেন। তবে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।
ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সকাল ৭টার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। দুপুর ১২টা ও সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। দু’জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি বলেন, আমি ইসলাম গার্মেন্টসে চাকরি করি। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে আমি গুলিবিদ্ধ হই। প্রথমে উদ্ধার করে আমাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জন ঢাকা মেডিক্যালে এসেছিল। এদের মধ্যে ইসলাম গার্মেন্টসের আনজুয়ারা বেগম নামে এক নারীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ জামাল উদ্দিনের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে।
সূত্র মতে, ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। মজুরি বোর্ড ঘোষিত বেতন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।