মু. রিয়াজুল ইসলাম লিটন: সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন-এর সভাপতি অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।

তাঁরা বলেছেন, নির্বাচন এলে এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, বেড়ে যায়। আমাদের দেশের নির্বাচনকালীন সময়গুলো ও নির্বাচন পরবর্তী সময়গুলোতে অতীতে যে জঘন্যতম ঘটনা প্রবাহ ঘটানো হয়েছে বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচন পূর্বক ও পরবর্তী সময়গুলোতে দেশের নিরীহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুও আদিবাসী মানুষের বাড়ীঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া, লুটপাট, হত্যা, আশি বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নিষ্পাপ শিশুদের ধর্ষন করা, দেশত্যাগে বাধ্য করা সেই সময়গুলো জাতীয় জীবনে সুখকর ছিলো না। আমরা মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের মহান সংবিধানে সকল নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশে যে কোন নির্বাচন আসলেই সমাজের একটি ষড়যন্ত্রকারী সুবিধাবাদী মহল ঠুনকো অজুহাতে দেশের নিরীহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও দূর্বল জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার চালিয়ে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই ধরনের জঘন্য কাজ করতে উৎসাহী হয়ে উঠে। আমরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সমাজের বিবেকবান নাগরিকদের প্রতি আহবান জানাই, দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে স্বার্থানেশী মহলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন, সজাগ থাকুন। নির্বাচনকে কোন অবস্থায় প্রশ্নবৃদ্ধ করার চেষ্টা কারীদের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সমাজের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারী) এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অনাস্থার কারণে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন আসন্ন হলে সাধারণ মানুষ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। যে নির্বাচনই হোক, সেটা আমাদের জন্য আশঙ্কা ও আতঙ্কের। সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপত্তাহীনতার অভাবে ভোট দিতে না পারে, এর দায় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। তারা আরও বলেন, নির্বাচনের সময়ে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে কেউ ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনও প্রার্থী এমন আচরণ করলে প্রয়োজনে তার প্রার্থিতা বাতিল করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা এই অসহনীয় পরিস্থিতির অবসান চাই।

বিবৃতিতে তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংকটের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক চক্র, লুটেরা অসাধু চক্র সমাজ ও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে। মূলত দেশে নির্বাচনব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগে নিকট অতীতেও নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘু, আদিবাসী, নিরীহ মানুষের ওপর নিপীড়ন, মানুষ হত্যা, ভাঙচুর, লুটপাট, ট্রেন, বাস, লঞ্চসহ পরিবহন ধ্বংস করা, অত্যাচার, ধর্ষণ, ক্ষেত্রবিশেষে দেশ থেকে বিতাড়িত করার মতো বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। এবারও পূর্বোক্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, এর নিশ্চয়তা নেই।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা মনে করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে নির্বাচনী কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা দিতে হবে। সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।