দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ক্রমাগত ভালো করলেও কোনোভাবেই আইসিসি ইভেন্টে সাফল্যের দেখা পাচ্ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে অসংখ্যবার সেমিফাইনালে গিয়েও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। এরপর দলের সঙ্গে লেগে যায় ‘চোকার্স’ অপবাদ। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে সেই অপবাদ ঘোচানোর সবচেয়ে ভালো সুযোগ ছিল দলটির। তবে সুযোগ পেয়েও তার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারল না প্রোটিয়ারা। সুবিধাজনক স্থানে থেকেও ভারতের কাছে হেরে গেছে ৭ রানে। ২০০৭ সালের উদ্বোধনী আসরের পর দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত।
২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের মাধ্যমে সবশেষ আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল ভারত। এরপর তিনটি ফাইনাল খেললেও শিরোপার দেখা পাননি রোহিত শর্মারা। আজ চতুর্থবারের প্রচেষ্টায় শিরোপাখরা ঘোচাল দলটি।
ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। উত্তেজনায় ঠাসা এক ম্যাচ দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। কখনো দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে, কখনো ভারতের দিকে হেলেছে ম্যাচ। এক পর্যায়ে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪ বলে দরকার ছিল মাত্র ২৬ রান, হাতে ৬ উইকেট। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বিস্ফোরক হয়ে ওঠা হেনরিখ ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা জাগান হার্দিক পান্ডিয়া। ওই ওভারে ৪ রান দেন হার্দিক। তবে ভারতের জয়ের আসল কারিগর জাসপ্রিত বুমরাহ। ১৮তম ওভারে মার্কো জেনসেনের উইকেট নেওয়াসহ মাত্র ২ রান দেন তিনি। শেষ ২ ওভারে ২০ রান আর নিতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের দেওয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্যে এদিন শুরুতেই রিজা হেনড্রিক্স ও অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে হারায় ভারত। তবে দ্বিতীয় উইকেটে প্রোটিয়াদের হয়ে দারুণ জুটি গড়েন কুইন্টন ডি কক ও ট্রিস্টান স্টাবস। ১২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানো দলকে নিয়ে যান ৭০ রান পর্যন্ত। তবে এই রানের মাথায় অক্ষরের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন দারুণ খেলতে থাকা স্টাবস (২১ বলে ৩১)।
স্টাবসকে হারালেও দমে যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। হেনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে আরও ৩৬ রান যোগ করেন ডি কক। ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ফেরেন ডি কক, দলের রান তখন ১০৬। পঞ্চম উইকেটে ভারত শিবিরে ভয় ধরান হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। পাঁচ নম্বরে নেমে ২৭ বলে ৫২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন ক্লাসেন। তবে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে তিনি ফিরলে আর জয়ের বন্দরে ভিড়তে পারেনি প্রোটিয়ারা।
এদিন প্রথমে ব্যাট করে বিরাট কোহলির ফিফটিতে ১৭৬ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে ভারত। তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানের বড় পুঁজি পায় ভারত। বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে আজ টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে আগের ম্যাচগুলোতে রানের ফুলঝুরি ছোটালেও ফাইনালে ব্যর্থ রোহিত। রান পাননি তিনে নামা ঋশাভ পান্ত ও চারে নামা সূর্যকুমার যাদবও। ৩৪ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখেছেন অফফর্মে থাকা কোহলি। চতুর্থ উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ৫৪ বলে গড়েন ৭২ রানের জুটি।
এদিন ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি পেয়ে দারুণ ব্যাটিং করেন অক্ষর। তবে ভারতের সেমিফাইনালের নায়ক আউট হয়েছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। নন-স্ট্রাইকে থেকে রান নিতে গিয়েও ফিরতে পারেননি। উইকেটের পেছন থেকে কুইন্টন ডি ককের দুর্দান্ত এক থ্রোতে বিদায় নেন অক্ষর। ততক্ষণে ৩১ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ফেলেছেন তিনি।
অক্ষরের বিদায়ের পর শিভাম দুবেকে সঙ্গে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন কোহলি। নিজের ফিফটি তুলতে ব্যয় করেন ৪৮ বল। ফিফটির পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন এবারের বিশ্বকাপে পজিশন বদলে ওপেনিংয়ে নামা এই ব্যাটার। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ফেরার আগে করেন ৭৬ রান। ৫৯ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি চার ও ২ ছক্কায়। ছয়ে নামা শিভাম ১৬ বলে ২৭ রান করে শেষ ওভারে আউট হন। আরেক পাশে হার্দিক পান্ডিয়া অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে, খেলেছেন ২ বল। তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ঘোচাল দলটি।