অধিকার আদায়ে সফল, এবার পালা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার। সেই দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন রাজপথে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর দেশে চলমান অস্থিরতার সময়ে তারা মাঠে নেমেছেন ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলে এ কর্মসূচি। এ সময় আন্দোলন চলাকালে সড়কে পড়ে থাকা আবর্জনা দলবেঁধে পরিষ্কার করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি যেসব সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই, সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। এ সময় চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করতে দেখা যায় তাদের।
গতকাল সকাল থেকে দেশের প্রায় সব শহরের বিভিন্ন স্থানে এ কর্মসূচি শুরু হয়, যা চলমান বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এমন দায়িত্বশীল আচরণকে স্বাগত জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও। রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা রাখছে তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর প্রায় ভেঙে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। নিরাপত্তাহীনতায় কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোড়ে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এতে অংশ নিয়েছেন সাধারণ মানুষও।
গতকাল সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, যানজট নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত আনসার বাহিনীকে সহযোগিতা করছেন শিক্ষার্থীরা। আবার যেসব সড়কে আনসারের উপস্থিতি ছিল না, সেগুলোতে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে ছিল শিক্ষার্থীরা।
সকাল থেকে রাজধানীর প্রায় সব ব্যস্ততম সিগন্যাল ও সড়কে বাঁশি নিয়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তারা সড়কে যানবাহনগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীদের পালা করে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। গণভবনের সামনে, শিয়া মসজিদ মোড়ে, টিএসসি এলাকা, ইসিবি, ধানমন্ডি, কলাবাগান, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, মিরপুর-১০ নম্বর, মিরপুর-১২ ও কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করা জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশটা আমাদের। এটাকে সুন্দর করে গোড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের। সাধারণ মানুষের চলাচলে যেন কোনোরকম বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্যই আমরা পথে নেমেছি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ট্রাফিক থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা থেকে দেশের সংস্কারে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা সবাই দেখেছে। এবার দেশ গঠনের দায়িত্বেও তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা রাখুন।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশানাল ইউনিভার্সিটির প্রায় ১২০ শিক্ষার্থীসহ আশপাশের স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১০০ ফিট রাস্তার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। সেই সঙ্গে ১০০ ফিট, নতুনবাজার ও শাহজাদপুর এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও করেন তারা। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজের প্রশংসা করে তাদের সাহায্যে পানি ও হালকা খাবার নিয়ে এগিয়ে আসে এলাকাবাসী।