সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে জাতিসংঘের ঘোষিত অবস্থানে একটুও পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তারা অতীতে যা বলেছে, তা অপরিবর্তিত আছে। গত সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। নবনির্বাচিত সরকারকে পথ পাল্টে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি নবায়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। ৭ জানুয়ারির বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন দীর্ঘ এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের এমন অবস্থান রীতিমতো শোরগোল ফেলেছিলো দেশের রাজনীতি এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে। ভলকার তুর্কের সেই বিবৃতিকে ভোট প্রশ্নে জাতিসংঘ তথা পশ্চিমা দুনিয়ার পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার তথা ভিন্নমত দমনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান খোলাসা করেই তার বিবৃতিতে বলেন- সহিংসতা এবং বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের দমন-পীড়নের ফলে ৭ জানুয়ারির ভোটের পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোটকে ঘিরে যা ঘটেছে তার তদন্ত দাবি করে জাতিসংঘ। কিন্তু সেই বিবৃতি নিয়ে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় গত সপ্তাহে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি লিখেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যন্থনিও গুতেরেজ। প্রশ্ন উঠে তাহলে কি নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ তার আগের বক্তব্য এবং অবস্থান থেকে সরে গেলো?
এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক তাঁর প্রশ্নে বলেন, আবার ক্ষমতায় আসায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব কি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভুয়া নির্বাচনের বিষয়কে অবজ্ঞা করেননি? এটি কি জাতিসংঘের আগের অবস্থান, নির্বাচনের অগণতান্ত্রিক প্রকৃতির বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় কি?
জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, না। তিনি (জাতিসংঘ মহাসচিব) প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেমনটা তিনি বিভিন্ন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান পুনর্নির্বাচিত হলে পাঠিয়ে থাকেন। এখান (পোডিয়াম) থেকে তাঁরা অতীতে যা বলেছেন, মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার যা বলেছেন, তা অপরিবর্তিত আছে।
ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক তাঁর প্রশ্নে বলেন, মুখপাত্র জানেন যে বাংলাদেশ ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ৭ বছর ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসনে অগ্রগতির অভাব সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। তারা ক্রমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে মানবিক তহবিল, আন্তর্জাতিকৃমানবিক মনোযোগ-সবকিছু সংকুচিত হচ্ছে। এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের পরিকল্পনা কী?
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, প্রথমত, কাউকে কখনো প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়। কোনো শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়। তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষা করে, এমন পদ্ধতিতে স্বেচ্ছায় তা করা দরকার। এটা তাঁদের (জাতিসংঘ) কাছে স্পষ্ট যে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করছে না।
স্টিফেন ডুজারিক আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার পরিদর্শন করেছেন। আমাদের যা দরকার, তা হলো কক্সবাজারের বাসিন্দাদের মতো যেসব মানুষ উদারভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য বিশ্বব্যাপী সংহতি বাড়ানো। কারণ, আমাদের সংহতিটা শরণার্থীদের দরকার। আমাদের সংহতিটা আশ্রয়দাতাদের দরকার। এসবের জন্য আমাদের বর্ধিত তহবিল দরকার।