নিউজ পরিক্রমা স্পোর্ট: ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল বাংলাদেশ। বিশেষ করে বিরাট কোহলির অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যেতে হয় লিটন-মাহমুদউল্লাহদের। বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ভারতে কাছে ৭ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। চলমান আসরে আফগানিস্তানকে হারিয়ে টাইগাররা শুভ সূচনা করলেও এ নিয়ে টানা ৩ ম্যাচ হারল। অন্যদিকে ভারত ৪ ম্যাচ খেলে ৪টিতেই জয় পেল।
আজ পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। বাংলাদেশ সময় আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হয়। যেখানে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ও ৫১ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।
২৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ১২.৪ ওভারে রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল ৮৮ রান তোলেন। অবশেষে জুটি ভেঙে রোহিত শর্মাকে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে ফেরান হাসান মাহমুদ। ৪০ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ করে তাওহীদ হৃদয়ের ক্যাচে মাঠ ছাড়েন রোহিত।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ৫৩ রান করা শুভমান গিল আউট হন। বাউন্ডারি থেকে মাহমুদউল্লাহ দারুণ এক ক্যাচ নেন। মিরাজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন শ্রেয়াস আইয়ার (১৯)। ভারতীয় ব্যাটিং দাপটে অবশ্য এরপর আর কোনো উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
৪১তম ওভার শেষে ভারতের জয়ের জন্য ২ রান দরকার ছিল। আর কোহলির সেঞ্চুরির জন্য দরকার ৩ রান। যেখানে নাসুমের করা তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি উদযাপন করেন তিনি। শতক করতে তিনি ৯৭ বলে ৬টি চার ৪টি ছক্কা মারেন। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম সেঞ্চুরি। আর একটি সেঞ্চুরি করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন শচীন টেন্ডুলকারকে। অন্যপ্রান্তে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন লোকেশ রাহুল।
বাংলাদেশ বোলার মিরাজ ২টি ও হাসান মাহমুদ ১টি উইকেট পান।
টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বে দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। এদিন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসের ব্যাটে শুরুটা দুর্দান্ত করলেও মাঝে খেই হারিয়ে ফেলে। তবে শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটে দলীয় আড়াইশ পার করে টাইগাররা।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খুব সাবধানী করে। ফলে দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ১০ রান তুলতে পারেন। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ৫ ওভারে বিস্ফোরক ব্যাটিং করেন এই দুই ওপেনার। ভারতীয় বোলারদের তুলোধুনো করে তুলে ৩০ বলে তুলে নেন ৫৪ রান। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন জুনিয়র তামিম।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং রানের জুটি এখন তানজিদ-লিটনের (৮৮ বলে ৯৩)। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ৬৯ রান।
ফিফটির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তানজিদ। কুলদীপ যাদবের বলে এলবি হওয়া এই ব্যাটার ৪৩ বলে ৫১ রান করেন। তবে এরপর এ ম্যাচে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে টাইগারদের নেতৃত্ব দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত দ্রুত ফিরে যান। ১৭ বলে ৮ রান করে তিনি রবীন্দ্র জাদেজার বলে আউট হন।
টপঅর্ডারে খেলতে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মোহাম্মদ সিরাজের বলে খোঁচা দিলে উইকেটের পেছনে দারুণ এক ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। মিরাজ ১৩ বলে ৩ রানে ফেরেন। ভালো খেলতে থাকা লিটন দাস ফিফটির পরও দেখেশুনে ব্যাট চালান। তবে জাদেজার বলে মাথা গরম করে ফেলেন এই ব্যাটার। তুলে মারতে গিয়ে শুভমান গিলের ক্যাচে মাঠ ছাড়েন। ৮২ বলে ৭টি চারে ৬৬ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে।
অফফর্মে থাকা তাওহীদ হৃদয়ও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। শার্দুল ঠাকুরের বলে আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে ১৬ রান করেন। এরপর মুশফিকুর রহিম ভালো শুরু পেলেও জসপ্রিত বুমরাহর কাছে পরাস্থ হন। ৪৬ বলে একটি চার ও সমান ছক্কায় ৩৮ করেন তিনি। ১৪ রান করা নাসুম আহমেদকে ফেরান সিরাজ। ঝড়ো ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ ওভারে বুমরাহ বলে আউট হলেও নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেন। তিনি ৩৬ বলে ৩টি চার ও সমান ছক্কায় ৪৬ রান করেন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট পান বুমরাহ, সিরাজ ও জাদেজা।